Skip to content

মানুষ যা কিছু দেখে, অধ্যয়ন করে বা চলতে ফিরতে অভিজ্ঞতা লাভ করে তা মানুষের মনে ছাপ সৃষ্টি করে।

Notifications You must be signed in to change notification settings

fruzelee/what-a-human-sees

Folders and files

NameName
Last commit message
Last commit date

Latest commit

 

History

5 Commits
 
 

Repository files navigation

মানুষ যা কিছু দেখে

আশা করি সকলে বুঝার চেষ্টা করবে। মানুষ যা কিছু দেখে, অধ্যয়ন করে বা চলতে ফিরতে অভিজ্ঞতা লাভ করে তা মানুষের মনে ছাপ সৃষ্টি করে। এর উদাহরণ অনেকটা মেমোরি কার্ডের মতো। এই ছাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা জমা রাখতে পারা নির্ভর করে স্মরণশক্তির উপর।

পরবর্তী ধাপ হলো, মনে যে ছাপ সৃষ্টি হয় সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। এই তথ্য নিতে পারাটা নির্ভর করে প্রত্যেকের যোগ্যতার উপর। এর রেজাল্ট সবসময় ভাল বা মন্দ, উপকারী বা ক্ষতিকর এই দুইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। এই সামর্থ আল্লাহ পাক কিছুটা পশু পাখিকেও দিয়েছেন। যেমন, তুমি যদি একটা কুকুরকে লাঠি দিয়ে ভয় দেখাও বা আঘাত করো, তাহলে পরবর্তিতে সে তোমাকে বা লাঠিকে দেখলে সে এর মধ্যে নিজের ক্ষতি বুঝতে পারবে।

মানুষের মনে তার অধ্যয়ণ ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে অসংখ্য ছাপ ও সেই সব ছাপ থেকে গৃহীত তথ্য জমা হয়। এর পরের ধাপ হলো মানুষ তার সংগ্রহে থাকা তথ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। সিধ্যান্ত নিতে পারা মানুষের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা এবং এই যোগ্যতাই মানুষকে একেক স্তরে পৌছে দেয়। সিধ্যান্ত নেয়ার সময় যে যত বেশি তথ্যের সমন্বয় সাধন করতে পারে সে তত বেশি যোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং সে তত বেশি সফলতার নিকটবর্তি হতে সক্ষম হয়।

মানুষের সর্বশেষ ধাপ হলো চালনা করার যোগ্যতা। সে হয় কেবল নিজের শরীরকে চালাবে অথবা কোনো টুলস বা যন্ত্র চালাবে বা অন্য মানুষদের চালাবে। যারা পূর্বের তিনটি স্তরে দূর্বল তারা কেবল নিজের শরীরকে চালায়, এরা সমাজের মজদুর শ্রেণীর লোক এবং নিম্নতর স্তরের লোক বলে গণ্য। আর যারা প্রথম তিনটি স্তরে এতোটুকু উন্নত যে চতুর্থ স্তরে এসে কোনো টুলস বা যন্ত্র চালাতে সক্ষম হয়, এরাও অধিনস্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। সে চাই যত বড় বস্তুর উপরই দক্ষতা অর্জন করুক না কেনো, সে আসলে পরাধীন থেকে যায়। এদের মূল্যও সমাজে কম হয়, কারণ এরা সংখ্যায় যথেষ্ঠ থাকে। একজন রকেট চালাতে পারে বা বিমান চালাতে পারে, সমাজে এই ব্যক্তির তেমন মূল্যবান নয়, কারণ এই ব্যক্তির রিপ্লেসমেন্ট সম্ভব। এরা সামান্য মূল্যের পণ্যমাত্র। আর সর্বশেষ যারা প্রথম তিনটি স্তরে এতোটাই দক্ষ যে চতুর্থ স্তরে এসে মানুষদের চালাতে পারে, এরা সমাজের নেতৃস্থানীয় লোকজন, সমাজে এদের বেশি প্রয়োজন, কারণ এদের রিপ্লেস্মেন্ট পাওয়া কঠিন হয়।

মোটকথা হলো, এই চারটি জিনিস মিলেই হলো মানুষের যোগ্যতা এবং এর দ্বারাই মানুষের মাঝে শ্রেণি নির্ধারিত হয়। কেউ মনিব হয় বা কেউ গোলাম হয়, কিংবা বলতে পারো কেউ স্বাধীন হয় বা কেউ পরাধীন হয়। যদি জাগতিক বিষয় চিন্তা করি, তাহলে উপরের প্রতিটি স্তরে উন্নতি সাধন করা নির্ভর করে মানুষের চেষ্টা ও পরিশ্রমের উপর।

এখন আসা যাক, ইসলাম কি জিনিস? এটা নিয়ে কিছু আলোচনা করি। পরে উপরের আলোচনার সাথে সমন্বয় সাধন করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। ইসলামের বুনিয়াদি ভিত্তি হলো কুরআন এবং এর রিফ্লেকশন হলো হাদিস। নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ও হাদিস বুঝতে পারার জন্য কিছু সূত্র বলে গিয়েছেন। একটি খুবই জরুরি সূত্র হলো, কুরআন ও হাদিসের অধিকাংশ সময় দুটি অর্থ থাকে, শাব্দিক অর্থ ও রূহানি অর্থ। রূহানি অর্থ সবসময় শাব্দিক অর্থের উপর প্রাধান্য লাভ করবে। একটি উদাহরণ দেই, এক হাদিসে এরশাদ হয়েছে, যেই ঘরে কুকুর থাকে সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না। এখন যারা মানতে চায় ও শুধু শাব্দিক অর্থ নিতে সক্ষম, তারা কেবল তাদের ঘরে কুকুর প্রবেশ করতে দিবে না। আর যারা মানতে চায় না, তারা এখানে প্রশ্ন তুলবে, কুকুরে কি সমস্যা? কিন্তু এই হাদিসের রূহানি অর্থ হলো, এখানে ঘর বলতে মানুষের দিলকে বোঝানো হয়েছে। যার দিলে কুকুরের স্বভাব (হিংস্রতা ও হিংসা) থাকবে সেই দিলে নূর (কারণ ফেরেশতা নূরের তৈরি) প্রবেশ করবে না। নূর হলো আলো, যা দ্বারা মানুষ দেখতে পায়, ভালোমন্দ সনাক্ত করতে পারে। একটু খেয়াল করলেই এই হাদিসের সত্যাতা সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে। হিংসুটে ও হিংস্র স্বভাবের মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়। তাই এই হাদিসের শাব্দিক অর্থ ও রূহানি অর্থ যে উপলব্ধি করতে পারবে, সে হিংসা ও হিংস্রতা থেকে বেচে থাকার চেষ্টা করবে এবং নিজের ঘরেও কুকুর প্রবেশ করতে দিবে না। কেননা, মানুষ যে জিনিস নিয়ে নাড়াচাড়া করে সেই জিনিসের বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে আসতে থাকে। যেমন গরম বস্তু নিয়ে নাড়াচাড়া করলে তাপ তার শরিরে আসতে থাকে।

আর একটি হাদিস নিয়ে সংক্ষেপে বলি। একবার নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি উট এসে সিজদা করে সম্মান জানালো। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রসূল, এই অবুঝ জানোয়ার যখন আপনাকে সিজদা করলো, তাহলে আমরাও আপনাকে সিজদা করবো। তখন নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ পাক ব্যতীত অন্য কারও জন্য সিজদা করার অনুমতি থাকলে আমি মেয়েদেরকে বলতাম তারা যেনো তাদের স্বামীদেরকে সিজদা করে। এখন এই হাদিসের শাব্দিক অর্থ নিয়ে একজন হয়ত তার স্ত্রীর সামনে নিজের মূল্য নিয়ে বাহাদুরি করতে পারে। কিন্তু এই হাদিস আসলে পুরুষদেরকে তাদের স্ত্রীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করার তাগিদ দিচ্ছে।

আমরা আল্লাহ পাককে কেনো সিজদা করি? আল্লাহ পাক প্রতিনিয়ত আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে যাচ্ছেন। আল্লাহ পাকের ক্ষমতার সামনে আমরা নিতান্তই অসহায়। তিনি আমাদেরকে শারিরিক শক্তি দিয়েছেন, আমাদের খাদ্যপানি দিচ্ছেন, আমাদের সুস্থ রাখছেন, সবকিছুই তার অনুগ্রহ। আমরা ভুল করি, আল্লাহ পাকের বিধানকে অমান্য করি, কিন্তু তিনি আমাদেরকে অধিকাংশ সময়ই পাকড়াও করেন না। যারা আল্লাহ পাককে মান্য করে তাদেরকেও আল্লাহ পাক দান করেন, যারা আল্লাহ পাককে মান্য করে না তাদেরকেও তিনি দান করেন, বরং অমান্যকারীদেরকে তিনি অধিকাংশ সময় বেশি দান করে থাকেন। এইজন্যই দুনিয়াতে অমুসলিমদের দুনিয়াবি উন্নতি বেশি। আল্লাহ পাক বলেন, হে আমার বান্দা, যদি তুমি গোনাহ করতে করতে জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত পূর্ণ করে ফেলো, তারপর অনুতপ্ত হয়ে একবার আমাকে বলো, হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন, তাহলে আমি তোমার সব গোনাহ ক্ষমা করে দিবো, কারও পরোয়া করবো না। অন্যত্র বলেন, তোমার প্রত্যেক গোনাহের পরিবর্তে তখন একটি করে নেকি লিখে দিবো। অন্য এক জায়গায় বলেন, হে আমার বান্দা, যদি তুমি একটি নেক কাজ করো, তাহলে আমি কমপক্ষে তোমাকে দশগুণ দান করি, বরং সেটাকে আরো বৃদ্ধি করতে থাকি, আরো বৃদ্ধি করতে থাকি। আর যদি তুমি কোনো গোনাহ করো, তাহলে আমি তোমার জন্য একটি গোনাহই লেখি। অপেক্ষায় থাকি তুমি ক্ষমা চাইবে। আর ক্ষমা চাওয়ার সাথে সাথে ক্ষমা করে দেই। কিন্তু বিনিময়ে বান্দার নিকট থেকে আল্লাহ পাকের কোনো প্রাপ্তি নেই। আল্লাহ পাক বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ যদি আল্লাহ পাকের নাফরমানি করে, তাহলে আল্লাহ পাকের রাজত্বে এতোটুকু কম হবে না। আবার সারা দুনিয়ার মানুষ যদি আল্লাহ পাকের ফরমাবরদারি করতে শুরু করে তাহলে আল্লাহ পাকের রাজত্বে এতোটুকুও বৃদ্ধি পাবে না। এই আলোচনাটা শেষে করবো ইনশাআল্লাহ। তাহলে একজন পুরুষেরও তার স্ত্রীর প্রতি আচরণ হলো, সাধ্যমত এদের প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করা, এদের ভুল ক্ষমা করা এবং এদের নিকট থেকে কিছু প্রাপ্তির আশা না রাখা। যদি কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে ক্ষমা ও অনুগ্রহের আচরণ করে এবং বিনিময়ে স্ত্রীর নিকট থেকে কিছু আশা না করে, তখন সেই স্ত্রী স্বামীর এই আচরণের কারণে স্বামীর সামনে মাথা নত করে চলতে বাধ্য হবে। জবরদস্তির মাধ্যমে কখনই আনুগত্য হাসিল করা যায় না।

ইসলাম দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত প্রায়। আমরা ছোট থেকে কোথাও প্রকৃত ইসলামকে দেখিনি, না পরিবারের মাঝে, না সমাজের মাঝে, না মসজিদে বা না অন্য কোথাও। বিজাতীয়দের ধ্যানধারণার ব্যাপক প্রচারপ্রসার এবং ইসলামের ব্যাপক অপপ্রচারের কারণে আমরা ইসলাম সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ বা বলতে পারো ইসলাম নিয়ে আমাদের মাঝে ভীতি কাজ করে। অধিকাংশ মানুষ, বিশেষ করে মেয়েদের মাঝে এই ধারণা এখন বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, ইসলাম মানেই পরাধীনতা, এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না বা জবরদস্তীমূলক একটি ব্যবস্থা এবং যারা মানবে না তাদেরকে অত্যাচার করতে হবে, মেরে ফেলতে হবে, বোমাবাজি করতে হবে বা টেরোরিজম বা আত্মঘাতি বোমা হামলা ইত্যাদি। এখন এটা চিন্তা করার বিষয়, ইসলাম নিয়ে আমাদের মনে এই ছাপ ও তথ্যগুলো কিভাবে জমা হলো? আমরা ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত নাটক বা সিনেমা দেখেছি সেগুলোতে রাজাকারের চরিত্রে যাদেরকে দেখানো হয়েছে, এরা সবসময় হুজুর বা দাড়িটুপিওয়ালা। হলিওডের অসংখ্য সিনেমাতে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয় আরবদেরকে। আমি ২০০৯-১০ সালে একটি ডকুমেন্টারি দেখেছিলাম, কানাডিয়ান একজন খ্রিষ্টান প্রোফেসার তৈরি করেছে। “The Real Bad Arabs” যেখানে সে হলিউডের ১০০০ টা সিনেমা, কার্টুন ও টিভি সিরিজের মধ্যে আরবদেরকে ভিলেন হিসেবে দেখানোর কথা উল্লেখ করেছে। এগুলোতে আরবদের চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে, এরা বিলাসিতা করে, এরা মেয়ে পিপাসু, এরা খুনি, এরা টেরোরিস্ট। এভাবে ব্যাপক প্রচারের কারণে আমাদের মুসলমানদের মনেও ওদের সম্পর্কে এরকম একটি ছাপ সৃষ্টি হয়েছে, এদের সম্পর্কে খারাপ তথ্যই আমাদের মনে জমা হয়েছে, আমাদের মন এই তথ্যগুলোকে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, হয়ত ইসলামের কারণেই আরবরা এতো খারাপ। শেষ পর্যন্ত আমরা নিজেদেরকে ইসলামের বিপরীতে চালাচ্ছি। আমরা ইন্টারনেটে কতকিছু দেখি! কিন্তু যদি দেখতাম যে মায়ানমারে মুসলমানদেরকে বৌদ্ধ ও হিন্দুরা কিভাবে হত্যা করছে, কাশ্মীরে হিন্দুরা মুসলমানদের উপর কিরকম অত্যাচার চালাচ্ছে, আফগানিস্তানে ও ইরাকে আমেরিকানরা এখনো মুসলমানদেরকে হত্যা করে চলেছে, মেয়েদেরকে র‍্যাপ করে চলেছে, ফিলিস্তিনে আজ ৭১ বছরের বেশি মুসলমানদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে ইহুদীরা। এগুলো আমাদের চোখের সামনে হচ্ছে, কিন্তু আমেরিকানদের, ইহুদীদের, হিন্দুদের বা বৌদ্ধদের অত্যাচারের কাহিনী নিয়ে হলিউডে বা ইন্ডিয়ায় বা অন্য কোথাও কখনো কোনো সিনেমা বা নাটক হতে কি আমরা দেখেছি? সারা দুনিয়ার মিডিয়া, যা সরাসরি ইহুদি, নাসারা ও হিন্দুদের দখলে, এরা এদের মিডিয়ার অস্ত্র দ্বারা মুসলমানদেরকে ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণ করতে সক্ষম হয়েছে।

যাইহোক, আমার কথা হলো, প্রকৃত ইসলামের কোনো ছাপ ও তথ্য আমভাবে মানুষের মনে জমা নেই, যতটুকু আছে তা কেবল কিছু মিথ্যা নাটক সিনেমার ইমেজ, যা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে।

আমদের জীবনের অধিকাংশ সময়ই হয়ত কেটে গিয়েছে। জানা নাই কখন কার মৃত্যু এসে যায়। তাই গতানুগতিক যে জীবনে আমরা অভ্যস্ত, এটাকে নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে চিন্তা করতে শুরু করা উচিত, যেটা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যে যে অবস্থাতেই থাকি না কেনো, একটু চিন্তা করে দেখি যে আমাদের জীবনের পরিণতি আসলে কি? আমি কুরআনের তিনটি আয়াত ও এর ব্যাখ্যা বলে লেখা শেষ করার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ পাক বলেন, আসমান জমিনের মাঝে যাকিছু আছে এবং রাত্রদিনের পরিবর্তন এই সবই বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন। যারা সর্ব অবস্থায় আল্লাহ পাককে স্মরণ করে এবং এইসব কিছু নিয়ে চিন্তা করে। (এবং বলে) হে আল্লাহ, আপনি এই সবকিছুঁকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি, আপনি পবিত্র, তাই আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দিন।

এই আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করে দেখি, আল্লাহ পাক আসমান জমিনের মাঝে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং রাত ও দিনের পরিবর্তন এইসবকিছু কেনো? চাঁদ-সূর্যের আবর্তণ, গ্রীষ্ম ও শীত কালের আবর্তন কেনো হয়, বা যদি এই আবর্তণ পরিবর্তন না হতো তাহলে কি হতো? চাঁদ ও সূর্যের আবর্তণে মানুষ ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ, মাস ও বছর গণনা করে। আবার দিক নির্ণয় করে, এই কাজ আসমানের তাঁরাও ব্যবহৃত হয়। গ্রীষ্মকালের গরম মানুষকে এক ধরণের ফলন দেয়, আবার শীতকালের ঠাণ্ডা অন্য ধরণের ফলন দেয়। বাতাস ও পানি ছাড়া মানুষ বাচতেই পারবে না। সমুদ্রের উপর নৌকার চলা এবং উহার তল থেকে মাছ ও অন্যান্য সম্পদ আহরণ করা। এভাবে দুনিয়ার যত জিনিস আছে, মানুষ যদি উহাতে গভীরভাবে চিন্তা করে, তাহলে এই সবকিছুতে সে নিজের জন্য কোনো না কোনো উপকার খুঁজে পাবে এবং শেষ পর্যন্ত সে এই সিদ্ধান্তেই উপনিত হবে যে, আল্লাহ পাক এই সবকিছুকে মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বভ্রম্যাণ্ডের এই এতো বড় আয়োজন যেই মানুষের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, আমি সেই মানুষ। তাহলে আমাকে সৃষ্টি করার পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো বড় কারণ রয়েছে। যেকারণে এতোসব কিছুর আয়োজন করা হয়েছে। আমাকে বানানোর উদ্দেশ্য কখনোই এটা হতে পারে না যে, আমি নিজের সারা জীবনের অর্জিত বিদ্যাবুদ্ধির দ্বারা কেবল টাকা উপার্জন করবো, যা মন চায় খাবো, স্ত্রী-সন্তানদের লালণপালণ করবো ও সাধ্যমত সম্পদ জমা করার চেষ্টা করে যাবো। এই সবকিছুকে যদি মানুষের জন্য প্রয়োজন বলি, তাহলেও প্রয়োজন ও উদ্দেশ্য কখনো এক হতে পারে না। স্কুল, বই, খাতা ও কলমকে পড়াশুনা করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বলা যায়, কিন্তু এইগুলোকে পড়াশুনা করার উদ্দেশ্য তো বলা যাবে না। যাতায়াতের জন্য গাড়ির প্রয়োজন, কিন্তু গাড়িকে যাতায়াতের উদ্দেশ্য বলা যাবে না। ঠিক তেমনি, আমাদের বেচে থাকার জন্য খাদ্য, পানি, কাপড়, বাসস্থানের প্রয়োজন এবং এগুলো যোগার করার জন্য জীবিকার প্রয়োজন, কিন্তু এই জীবিকা মানুষের দুনিয়ায় আসার উদ্দেশ্য নয়।

আমাদের দ্বিতীয় স্তরের প্রয়োজন হিসেবে স্ত্রী সন্তান প্রয়োজন। দ্বিতীয় স্তর বলার কারণ হলো, স্ত্রী সন্তান ছাড়াও মানুষ বেচে থাকে। তাই স্ত্রী সন্তানও জীবনের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের পারিবারিক সম্পর্কগুলোর কথা একটু গভিরভাবে চিন্তা করে দেখো, কোনোটাই একেবারে নিঃস্বার্থ না। ভাইবোনেরা সবার আগে আলাদা হয়ে যায়। উদাহরণ, প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বিদ্যমান। সন্তানও বড় হলে অধিকাংশ সময় পৃথক হয়ে যেতে চায়। পিতামাতা সন্তানদের নিয়ে যতটা ব্যস্ত থাকে এবং করে, সন্তানরা তার বিন্দুমাত্রও করে না বা করতে পারবে না। সব মিলিয়ে দুনিয়াবি এই সম্পর্কগুলো এরকমই। পিতামাতাই কেবল সন্তানের জন্য শেষ পর্যন্ত দোয়া করে যেতে থাকে, নিঃস্বার্থভাবে। কিন্তু বাকি সব পারিবারিক সম্পর্কগুলোর বন্ধন দুনিয়াতেই একটা সময়ের পর শিথিল হয়ে যায়। তাই পরিবারও মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য নয়। তাহলে জরুরি প্রশ্ন হলো, আসলে কি উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক আমাদেরকে দুনিয়াতে এতো সব আয়োজন করে পাঠালেন? উদ্দেশ্য পর্যন্ত যাওয়ার আগে অল্প একটু আলোচনা প্রয়োজন।

ধরুন কারও একটি ছোট মেয়ে সন্তান আছে। সে পছন্দ করে কিছু একটা উপহার বা খাবার তার মেয়েকে এনে দিলে। মেয়েটি সেই উপহারটা পেয়ে খুব খুশী, আনন্দে সেটা নিয়ে খুব খেলতে শুরু করলো বা সেই খাবারটা খেয়ে খুব মজা পেলো, খেতে যেয়ে নাকমুখ জামা মাখিয়ে ফেললো, এবং এই কারণে মেয়েটি তাকে জড়িয়ে ধরে নিজের আনন্দ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো। তাহলে এই ঘটনায় মেয়েটিই সেই খানাটা ভোগ করলো বা উপহারটা দিয়ে মজা পেলো, কিন্তু মেয়েটির আনন্দে সেই ব্যক্তির আনন্দ যেনো বেশি হলো। কারণ সেই ব্যক্তি হলো দাতা এবং যে গ্রহিতা সে দাতার দেয়া জিনিসের কদর করেছে, দাতার প্রতি কৃতজ্ঞতাসুলভ আচরণ করেছে।

কিন্তু যদি মেয়েটি সেই ব্যক্তির পছন্দ করে দেয়া উপহারটা বা খানাটাকে কদর না করে ছুড়ে ফেলে দিতো, তাহলে প্রথমে মেয়েটি নিজে সেই উপহার বা খানার মজাটা থেকে বঞ্চিত হতো এবং মেয়েটির এই অকৃতজ্ঞতার কারণে সেই ব্যক্তিও কষ্ট পেতো। আর যদি এরকম আচরণ সে সবসময় করতেই থাকে, তাহলে তার প্রতি সেই ব্যক্তির স্নেহ আস্তে আস্তে কমে যাবে এবং কখনো কখনো রেগে গিয়ে হয়ত মেয়েটিকে চড়-থাপ্পরও মেরে বসবে।

আল্লাহ পাক কালামে পাকে এরশাদ ফরমান, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছি এবং তোমাদেরকে খুশী হয়ে দ্বীন হিসেবে ইসলামকে দিয়েছি।

এখন আল্লাহ পাক পছন্দ করে আমাদেরকে দ্বীন হিসেবে ইসলাম দিলেন এবং এর মধ্যে আল্লাহ পাক আমাদের সকল উপকারকে নিহিত করে দিলেন। ইসলামের উপর চললে আমাদের জীবনেই সুখ আসবে এবং ইসলাম ব্যতীত সেই সুখ কখনো আসবে না। এখন আমরা যদি আল্লাহ পাকের পছন্দ করে দেয়া এই উপহারের কদর না করে ছুড়ে ফেলে দেই, এটাকে জানার ও মানার কোনো চেষ্টাই না করি, তাহলে আমরাই বঞ্চিত হবো এবং আমাদের এই অকৃতজ্ঞতার কারণে আল্লাহ পাক কষ্ট পাবেন। হয়ত এই কারণে আল্লাহ পাক কিছু শাস্তিও দিবেন। তাহলে আমাদেরকে যেই উদ্দেশ্যে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তা হলো আমরা আল্লাহ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞ হই এবং আল্লাহ পাকের দেয়া এই উপহার ইসলামকে যথাযথভাবে নিজের জীবনে ব্যবহার করে নিজেরাই শান্তি লাভ করি।

এখন কে কতটুকু ইসলামের উপর চলতে পারলো, এই পরীক্ষাই হলো দুনিয়ার জীবন। যেহেতু এই জীবনটা একটা পরীক্ষা, একটা স্ট্যান্ডার্ড তো অবশ্যই প্রয়োজন। সেই স্ট্যান্ডার্ড বা পরীক্ষার ১০০ মার্ক হলো, নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন। দ্বীন বা ধর্মের সবচেয়ে সঠিক অর্থ হলো লাইফ স্টাইল। এটা কেবল নামাজ রোজা বা কুরবনী নয়। নামাজ রোজা তো কিছু ইবাদতের নাম, যা আমাকে ইসলাম বুঝতে ও এর উপর চলতে সাহায্য করবে। আসলে তো ইসলাম আমার পুরো জীবনের নাম। তাই মৃত্যুর পর যখন আল্লাহ পাকের সামনে আমরা জবাবদিহিতার জন্য দাড়াবো, তখন আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রথম প্রশ্ন হবে, “তোমার জীবনটাকে কিভাবে কাটিয়েছো?’ আর আমাদের জীবনটা যদি কেবল খানাপিনা ও সাধ্যানুযায়ী ভোগবিলাসে কেটে যায়, তাহলে প্রথম ক্ষতি হলো আমরা কোনোদিন শান্তি পাবো না, মাঝেমাঝে বিচ্ছিন্ন কিছু ফুর্তি লাভ হতে পারে, আর মৃত্যুর পর চিরস্থায়ী জীবনে বিপদে পরে যাবো।

নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন আমাদের জন্য ১০০ মার্ক মানে হলো, উনার জীবনটা নিয়ে প্রথমে আমাদের অধ্যয়ন করতে হবে, তারপর সেখান থেকে intelligence গুলো সনাক্ত করতে হবে, তারপর এই intelligence গুলোর সমন্বয় সাধন করে নিজের জীবনকে চালাতে হবে।

মানুষ দুনিয়াবি যা কিছু জিনিস টার্গেট নিয়ে নিজের জীবনকে পরিচালিত করে, তা শান্তি লাভের উপরকরণ হতে পারে। কিন্তু সেগুলো অর্জনের মাধ্যমে শান্তি পাওয়া আল্লাহ পাকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। যেমন ধরা যাক, একটা গুছানো ঘরে নরম বিছানা, বালিশ, এসি বা ফ্যান সবকিছু আছে। এই সবগুলো আরামদায়ক ঘুমের উপরকরণ হতে পারে, কিন্তু সেই ঘরে শুয়ে আমার ঘুম হবে কিনা এটা আল্লাহ পাকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। একজন পছন্দ করে একটি মেয়েকে বিয়ে করলো সুখী হওয়ার জন্য। কিন্তু এই মেয়ের মাধ্যমে সে সুখ পাবে কিনা এটা আল্লাহ পাকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। ঠিক তেমনি সন্তান সুখও দিতে পারে, আবার গলার কাটাও হতে পারে। আমার এক ছাত্রী একবার আমাকে বললো, স্যার, আমার ছোট ভাইটা ন্যাশা করে, ঘরের জিনিস ভাঙচুর করে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার বাবার ইনকাম কি হালাল? মেয়েটি বললো, না। তাই মানুষ যখন আল্লাহ পাকের হুকুমের খেলাফ চলে তখন সে যেইসব জিনিসের কারণে আল্লাহ পাকের হুকুমকে লঙ্ঘণ করে সেই সকল জিনিস তার বিরুদ্ধে চলে যাবে। আল্লাহ পাকের একটি শাস্তি হলো, আল্লাহ পাক তার রহমতের ফেরেশতাকে আল্লাহ পাকের হুকুমকে অমান্যকারি মানুষ থেকে সরিয়ে নেন। ফলে শয়তান তাকে পেয়ে বসে এবং শয়তান তার দিলের মাঝে তার আপনজনদের ব্যাপারে বিদ্বেষ ঢেলে দেয়। ফলে ভাইবোনেরা একে অন্যকে সহ্য করতে পারে, স্বামীস্ত্রী পরস্পরের শত্রু বনে যায়, পিতা ও সন্তানের মধ্যে কোন্দল শুরু হয় ইত্যাদি। শয়তানের একটি বড় চালবাজির ব্যাপারে আল্লাহ পাক কুরআনে আমাদেরকে বারবার সাবধান করেছেন, তা হলো সে আমাদের ভুলগুলোকে আমাদের চোখে ভালো করে দেখায়, এর পক্ষে দিলের মধ্যে যুক্তি দাড় করায়। তখন মানুষ ভুলকেই সঠিক মনে করে চলতে থাকে। এর উদাহরণ সমাজের সকলে। আর আল্লাহ পাকের হুকুমকে মান্যকারীর জন্য একটি উপহার হলো, আল্লাহ পাক মানুষের দিলে তার জন্য মহব্বত ঢেলে দেন।

আর মানুষ যখন দুনিয়াবি বস্তুকে আপন লক্ষস্থল বানায়, সে ইসলাম বোঝার ব্যাপারে অক্ষম হয়ে যায়। তার মনে যদি সঠিক ইসলামের জ্ঞান বা ছাপ জমা হয়ও, সে দ্বিতীয় স্তরে এসে সেখান থেকে তথ্য নেয়া ও তৃতীয় স্তরের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এই কারণেই এখনকার আলেমরা ইসলাম নিয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেও ইসলাম কি জিনিস বুঝতে পারে না। যদি খেয়াল করে থাকো তাহলে বুঝবে যে, দুনিয়াটা নিজে অন্ধকার, এর নিজস্ব কোনো আলো নাই। একে আলোকিত করার জন্য আল্লাহ পাক সূর্য ও চাঁদকে ব্যবহার করেন। এই দুনিয়ার মাটি, আগুন, বাতাস ও পানি দ্বারা আল্লাহ পাক মানুষের দিলকে বানিয়েছেন। এর মাঝে মাটির ধীরতা, আগুনের হিংস্রতা, বাতাসের চঞ্চলতা ও পানির তাল মিলিয়ে চলার সংমিশ্রণ থাকে। এর প্রতিটির আবার শাখাপ্রশাখা আছে। যেহেতু অন্ধকার দুনিয়ার উপাদান দ্বারা এই দিল তৈরি, এই দিলটারও নিজস্ব কোনো আলো নাই। একে আলোকিত করার জন্য আল্লাহ পাক সূর্যের ন্যায় কুরআন দিয়েছেন, যেটা নিজেই সকল আলোর উৎস, এবং সূর্যের প্রতিফলিত আলো চাঁদের ন্যায় নবীজী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নতকে দিয়েছেন, যেটা কুরআনের প্রতিফলিত আলো। কুরআন ও সুন্নাহ-এর আলোকে যে যত বেশি উপলব্ধি করতে পারবে সে তত বেশি আলোকিত মানুষ হবে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সে তত বেশি মূল্যবান মানুষ হবে।

মানুষকে আল্লাহ পাক মায়ের গর্ভে তিনটি অন্ধকারে সৃষ্টি করেছেন। বাইরে থেকে পেটের চামড়া-গোস্তের আবরণের অন্ধকার, পেটের গহবরের অন্ধকার এবং সেই থলির অন্ধকার যার ভিতরে বাচ্চার শরীর গঠিত হয়। মানুষও দুনিয়াতে এসে তিনটি অন্ধকারে থাকে। এক, জাতিগত অন্ধকার। আমরা বাংলাদেশি হওয়ায় বাংগালী কিছু অন্ধকার আমাদের দিলে জমা হয়। বিভিন্ন রসম, প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি। দুই, আমাদের পরিবার, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের অন্ধকার। এদের চিন্তাভাবনা থেকে আমাদের কিছু মনমানসিকতা তৈরি হয়। এখানে আমরা অন্যদের অনুকরণ, সামাজিকতা, স্বভাবগত বৈশিষ্ট ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। তিন, নিজের দিলের চিন্তাভাবনার অন্ধকার। অহংকার, নিজের বুঝকেই সঠিক মনে করা, হিংসা, স্বার্থপরতা ইত্যাদি। মায়ের গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তাটা বাচ্চার শরীরের তুলনায় খুবই সঙ্কীর্ণ, বাচ্চা সেখান থেকে নিজে নিজে বেরিয়ে আসতে পারে না। একজন তার মাথাটা ধরে টেনে বের করে নিয়ে আসে। ফলে সে বাইরের আলোর জগত দেখতে পায়। শুরুতে তার পিছনের জগতের বিচ্ছেদ তাকে কাঁদিয়ে তুলে। কিন্তু আস্তে আস্তে সে নিজেকে এই জগতের সাথে অভ্যস্ত করে তুলে। এই জগতকে সে তার পিছনের জগতের তুলনায় অনেক প্রশস্ত ও আনন্দদায়ক পায়। আগের জগতে সে তার মায়ের শরীরের জন্য এক বোঝাস্বরূপ থাকে এবং মায়ের খাদ্যের রস নাড়ের মাধ্যমে শোষণ করে নিয়ে বেঁচে থাকে। আর যখন বাইরে বেরিয়ে আসে, তখন সে মায়ের জন্য আদরের বস্তু হয় এবং তাকে সবচেয়ে উন্নত খানা বুকের দুধ সাগ্রহে দান করে।

ঠিক তেমনি, যারা এই জাতিগত অন্ধকার, পারিবারিক অন্ধকার ও নিজের ভিতরের অন্ধকারে অভ্যস্ত, তাদের নিকট ইসলামের আলোতে প্রবেশের রাস্তাকে অনেক সঙ্কীর্ণ মনে হয়। ইসলামিক জীবন ও চিন্তাধারাকে সংকীর্ণ মনে করে। এই ধরণের মানুষই দুনিয়াতে বেশি এবং দুনিয়ার নিকট এরা বোঝাস্বরূপ। হাদিসে পাকে আছে, এরা জমিনের যেই অংশে বিচরণ করে জমিনের সেই অংশ তাদের জন্য বদদোয়া করতে থাকে, পশুপাখি এদের জন্য বদদোয়া করতে থাকে। এরা মৃত্যুবরণ করলে মাটি এদের মৃত্যু উপর খুশী হয় এবং কবর এদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। এরা নিজেদের স্বার্থের জন্য দুনিয়া থেকে যতটুকু পারে শুষে খায়। পক্ষান্তরে সে যদি তার দৃষ্টিতে সংকীর্ণ ইসলামের সেই রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে এবং তাকে এই বেরিয়ে আসতে কেউ সাহায্য করে, তাহলে শুরুতে আগের সেই মনমানসিকতা ত্যাগ করতে তার কিছুটা কষ্ট হয়। কিন্তু শীঘ্রই সে ইসলামের আলোতে অভ্যস্ত ও আনন্দিত হয়ে যায় এবং ইসলামের জীবনকে পূর্বের জীবনের তুলনায় অনেক বেশি প্রশস্ত পায়। সে তখন আগের তুলনায় সম্মানজনক রিজিক পায়। দুনিয়ার মানুষেরা তার খেদমতে লেগে যায়। হাদিসে পাকে আছে, আল্লাহ পাকের কোনো নেক বান্দা যে রাস্তা দিয়ে হেটে যায় সেই রাস্তা অন্য রাস্তার উপর গর্ব করে এবং তাকে দোয়া দিতে থাকে। পশুপাখি তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সে মৃত্যুবরণ করলে আসমান জমিন তার বিচ্ছেদের কারণে ক্রন্দন করে। কবর তার জন্য প্রশস্ত হয়ে যায়।

যাইহোক, সকলে ইসলামকে নিজের জীবনে নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানের সহিত শান্তিতে রাখবেন। ইসলাম এক সাগরের মতো, এই কয়েক পৃষ্ঠা লেখার মধ্যে কিভাবে সকলকে বুঝাবো। কিন্তু যদি এটা নিয়ে কেউ একটু ঘাটাঘাটি শুরু করে, ও গোনাহ থেকে তৌবা করে নেয়, তাহলে ইসলামের এক পরিচ্ছন্ন ছাপ তার মনে সৃষ্টি হবে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে নিজের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে জীবনকে চালাতে শুরু করে, তাহলে তার জীবনই সুন্দর হবে। এতে আল্লাহ পাক তার উপর খুশী হবেন, কিন্তু আল্লাহ পাকের এতে কোনো লাভ হবে না। আর যদি সে প্রচলিত অন্ধকারেই জীবনকে অতিবাহিত করে দেয়, তাহলে দুনিয়াতেও সে শান্তি পাবে না, আখিরাতেও অনেক বড় বিপদে পরে যাবে। এতে আল্লাহ পাক তার উপর কষ্ট পাবেন, কিন্তু আল্লাহ পাকের কোনো ক্ষতি হবে না। আমাদের জীবন আমাদের সিদ্ধান্ত ও কদমের দ্বারাই নির্ধারিত হবে। আল্লাহ পাক কারও প্রতি জুলুম করেন না। আল্লাহ পাক আমার কথাগুলো সকলকে উপলব্ধি করার ও এর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

About

মানুষ যা কিছু দেখে, অধ্যয়ন করে বা চলতে ফিরতে অভিজ্ঞতা লাভ করে তা মানুষের মনে ছাপ সৃষ্টি করে।

Resources

Stars

Watchers

Forks

Releases

No releases published

Packages

No packages published